নারায়ণগঞ্জ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র আল ফয়সাল আহম্মেদ আজমান। গত সোমবার রাতে কলেজের বন্ধুদের সাথে নগরীর জিমখানা রেলওয়ে কলোনীর পাশে জল্লারপাড় লেকে ঘুরতে গেলে সেখানকার কিশোর গ্যাং লিডার তানভীরের নেতৃত্বে হামলা করা হয় তাদের উপর।
দেওভোগ এলাকার বাসীন্দা কলেজ ছাত্র ফয়সালের বাবা এ বিষয়ে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। তবে এই হামলার ঘটনাই প্রথম নয়। গত ৬ মাসে কিশোর সন্ত্রাসী তানভীর অন্তত ৫০ জনকে কুপিয়েছে এবং আরো অনেকে তার দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। এরমধ্যে পুলিশ, সরকারি কর্মচারীসহ পাশ^বর্তী এলাকার মানুষও রয়েছে। জিমখানা কলোনীতে বসবাসকারী লোকজনের দাবি, তানভীরের বয়স কম হলেও অল্প বয়সে হত্যাসহ অসংখ্য মামলার আসামী তিনি। অথচ পুলিশ তাকে কখনো খুঁজে পায়না বলে দিনদিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে সে।
কলেজছাত্র আজমান বলেন, সেদিন রাতে আমরা বন্ধুরা মিলে জল্লারপাড় পার্কে আড্ডা দিতে যাই। এ সময় ওই ছেলে (তানভীর) এসে আমাকে বলে তরা চলে যা, আমরা বসমু। তখন আমি তাতে রাজি হইনি বলে সে কলোনীর দোকান থেকে এক সহযোগীকে ওদের অস্ত্র আর লাটি বের করতে বলে। তখন সাথে সাথে আমরা উঠে সেখান থেকে চলে আসার চেষ্টা করি। তবে ওরা আমাদের আটকে রেখে সবার সামনে মারধর করেছে। লাঠির আঘাতে আমি হাতে ও পায়ে ব্যাথা পেয়েছি এবং আমার একটি আইফোন মোবাইল ভেঙে গেছে।
ফয়সালের বাবা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, আমি পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনেছি ওই ছেলে অনেক মানুষকে এভাবে মারধর করছে। ওর কাজই কিছু হলে বগি দিয়ে কোপ দেওয়া। কয়েকদিন আগে পুলিশের গাড়িতেও হামলা করছে। তবে পুলিশ এই ছেলেকে কখনো ধরতে না পারায় সে একটার পর একটা ক্ষতি করে যাচ্ছে। আমি থানায় গিয়েছিলাম অভিযোগ করতে কিন্তু আমার অভিযোগ তারা সরাসরি গ্রহন করেনি। থানা থেকে বলা হইসে তদন্ত করে তারপর অভিযোগ গ্রহন করবে। অথচ দেখেন এই ছেলে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং সে সর্বক্ষণ সাথে অস্ত্র বহন করে।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিমখানা কলোনীর এক নারী বলেন, যেদিন জাকির খান মুক্তি পাইসে। ওইদিন তানভীরে দুইজনরে রাস্তায় ফালাইয়া মারধর করছে। কয় জাকির খান মুক্তি এখন আর কাউর টাইম নাই। ওরে কি জাকির খানে চিনে? কিন্তু নাম বিক্রি করা শুরু কইরা দিসে। আওয়ামীলীগের আমলে আছিল আজমেরী ওসমানের লোক আর এখন সে জাকির খানের হয়ে গেছে। আসল খারপ হইল পুলিশ। কারণ নারায়ণগঞ্জ থানার পুলিশ তানভীররে ধরেনা। চাইলেই ধরতে পারে কিন্তু তারা ধরেনা। কি কারণে ধরেনা সেটা তারাই জানে।
জিমখানা কলোনীর পশ্চিম দিকের এলাকা জল্লারপাড়। এই এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, তানভীরের বাবার নাম আলীজান। তানভীরের বাবা আর দুই জনই কলোনীর বড় মাদক ব্যবসায়ী। মা-বাবার মাদকের টাকা তানভীরকে শেল্টার দিচ্ছে। কারণ সে একটার পর একটা অপরাধ করলেও তার মা মাদকের টাকা দিয়ে সব আটকে দেয়। পুলিশ তাকে খুঁজেই পায়না। ৫ তারিখের পর কম হইলেও ৫০ জনকে কোবাইসে।
তবে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, ওর মাকে কিছুদিন আগে ধরে নিয়ে এসেছি। ওর চাচা, মামা সবাইকে ধরে আনলাম কিন্তু জামিকে বের হয়ে যায়। ওরে ধরার অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু কোনো ভাবেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আমি পুরোষ্কার ঘোষনা করলাম, যে তানভীরকে ধরিয়ে দিবে তাকে পুরোষ্কৃত করা হবে। ওর বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আছে।
আপনার মতামত লিখুন :